যমুনা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ


যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত কিলোমিটার | যমুনা সেতু কত সলে চালু হয়: দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ এবং একমাত্র দ্বিতল সেতু হতে যাচ্ছে এটি। এখনও পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের দিক থেকে প্রথম স্থানে আছে বঙ্গবন্ধু সেতু। যা যমুনা সেতু হিসবেও পরিচিত। 

যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত কিলোমিটার

সম্প্রতি পদ্মা সেতুর টোল নির্ধারণ করা হয়। তুলনা করলে দেখা যায় যমুনা সেতুর প্রায় দ্বিগুণ টোল নির্ধারণ করা হয়েছে এই সেতুর জন্য। টোল বেশি র্নিধারণের কারণে পদ্মা সেতুর সমালোচনা করেছেন অনেকে।

চলে আসে দুই সেতুর তুলনার বিষয়টিও। তবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দুটি সেতুর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য জানুন।

যমুনা সেতু বিশ্বের কততম সেতু 

বাংলাদেশের যমুনা নদীর উপর নির্মিত সেতুকে যমুনা সেতু বলা হয়। বাংলাদেশের যতগুলো সেতু রয়েছে তার মধ্যে দ্বিতীয় বড় সেতু হচ্ছে এই যমুনা সেতু। এটিকে বঙ্গবন্ধু সেতু নামকরণ করা হয়েছে। অনেকেই যমুনা সেতু সম্পর্কে জানতে চান।

যমুনা সেতু কত কিলোমিটার

যমুনা বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের যমুনা নদীর উপরে অবস্থিত একটি সড়ক ও রেল সেতু। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই যমুনা সেতুটি বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম সেতু। ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

এটি যমুনা নদীর পূর্ব তীরের ভূঞাপুর এবং পশ্চিম তীরের সিরাজগঞ্জকে সংযুক্ত করে। বঙ্গবন্ধু সেতুটি বাংলাদেশের পূর্ব এবং পশ্চিম অংশের মধ্যে একটি কৌশলগত সংযোগ প্রতিষ্ঠিত করে। এটি অত্র অঞ্চলের জনগণের জন্য অভ্যন্তরীন পণ্য এবং যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা সহো বহুবিধ সুবিধা বয়ে আনে।

পরবর্তিতে এই যমুনা সেতুর নামকরণ বঙ্গবন্ধু সেতু করা হয় । ১৯৪৯ সালে যমুনা সেতু স্থাপনের জন্য প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রথম এই উদ্যোগ নেন। কিন্তু তখন এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর কাজ শুরু হয় এবং ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া।যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত কিলোমিটার | যমুনা সেতু কত সলে চালু হয়, যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত কিলোমিটার | যমুনা সেতু কত সলে চালু হয়, যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত কিলোমিটার | যমুনা সেতু কত সলে চালু হয়

যমুনা সেতু বিশ্বের কততম সেতু

যমুনা  সেতু সম্পর্কে অনেকেই সাধারণ জ্ঞান জানতে চান। নিম্নে যমুনা  সেতু সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান আলোচনা করা হলো। এখানে যমুনা সেতু সম্পর্কিত সকল প্রশ্ন উত্তর রয়েছে। আপনারা এখান থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু সম্পর্কিত সকল প্রশ্ন এবং উত্তর জানতে পারবেন। তাহলে এবার যমুনা  সেতু সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর জেনে নিন –

প্রশ্নঃ যমুনা  সেতু কত কিলোমিটার?

উত্তরঃ যমুনা সেতু ৪.৮ কিলোমিটার।

প্রশ্নঃ যমুনা সেতুর খরচ কত?

উত্তরঃ যমুনা সেতু ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচ।

প্রশ্নঃ যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত?

উত্তরঃ যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.৫ মিটার।

প্রশ্নঃ ঢাকা থেকে যমুনা সেতু কত কিলোমিটার?

উত্তরঃ ঢাকা টাঙ্গাইল শহর থেকে যমুনা সেতুর দূরত্ব প্রায় ৩২ কিলোমিটার।

প্রশ্নঃ যমুনা সেতু কোন জেলায় অবস্থিত?

উত্তরঃ টাঙ্গাই জেলার পশ্চিম পাশে এবং সিরাজগঞ্জ জেলার পূর্ব পাশে যমুনা সেতু অবস্থিত।

প্রশ্নঃ যমুনাসেতুর দৈর্ঘ্য কত কিলোমিটার?


ত্তরঃ যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার।

প্রশ্নঃ যমুনা সেতু নির্মাণকারী কোম্পানির নাম কি?

উত্তরঃ যমুনা সেতু নির্মাণকারী কোম্পানির নাম হুন্দাই।

প্রশ্নঃ যমুনা সেতু উদ্বোধন তারিখ?

উত্তরঃ যমুনা  সেতু উদ্বোধন তারিখ হচ্ছে ২৩ জুন।

প্রশ্নঃ যমুনা সেতু কত সালে উদ্বোধন করা হয়েছে?
উত্তরঃ যমুনা সেতু ১৯৯৮ সালে উদ্বোধন করা হয়েছে।

প্রশ্নঃ যমুনা  সেতু কে উদ্বোধন করেন?

উত্তরঃ যমুনা (সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।

প্রশ্নঃ যমুনা সেতুর পিলার সংখ্যা কয়টি?

উত্তরঃ যমুনা  সেতুর পিলার সংখ্যা ৫০ টি।

প্রশ্নঃ যমুনা  সেতুর পাইল সংখ্যা কয়টি?

উত্তরঃ যমুনা  সেতুর পিলার সংখ্যা ১২১ টি।

প্রশ্নঃ যমুনা  সেতু কোথায় অবস্থিত?

উত্তরঃ টাঙ্গাই জেলার পশ্চিম পাশে এবং সিরাজগঞ্জ জেলার পূর্ব পাশে যমুনা  সেতু অবস্থিত।

যমুনা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

প্রশ্নঃ যমুনা সেতু বিশ্বের কততম সেতু?
উত্তরঃ যমুনা নদীর উপর ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট যমুনা  সেতুটি বিশ্বে ১১তম আর দক্ষিন এশিয়ার ৬ষ্ঠ দীর্ঘতম সেতু।

প্রশ্নঃ যমুনা সেতুর প্রস্থ কত?
উত্তরঃ যমুনা  সেতুর প্রস্থ প্রস্থ ১৮.৫ মিটার।

প্রশ্নঃ যমুনা  সেতু কত সালে স্থাপিত হয়?

উত্তরঃ মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রথম ১৯৪৯ সালে যমুনা সেতু স্থাপনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু তখন এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর এর কাজ শুরু হয় এবং ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

প্রশ্নঃ স্থাপত্য মান অনুযায়ী যমুনা  সেতুর আয়ুষ্কাল কত বছর?

উত্তরঃ স্থাপত্য মান অনুযায়ী যমুনা সেতুর আয়ুষ্কাল ১১০ বছর।

প্রশ্নঃ যমুনা  সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত কিলোমিটার?

উত্তরঃ যমুনা  সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.৫ মিটার।

প্রশ্নঃ যমুনা সেতু কোন সরকারের আমলে?

উত্তরঃ যমুনা সেতু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।

প্রশ্ন ১ঃ যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতু লম্বা কত?
উত্তরঃ যমনা বঙ্গবন্ধু ‍সেতু লম্বা হলো ৪.৮ কিলোমিটার।

প্রশ্ন ২ঃ যমুনা সেতুর প্রস্থ কত?

উত্তরঃ যমুনা সেতু ১৮.৫ মিটার প্রস্থ্য।

প্রশ্ন ৩ঃ যমুনা সেতু নির্মানে খরচ হয়েছে কত?

উত্তরঃ যমুনা সেতু নির্মানে খরচ হয়েছে ৩ হজার ৭৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

প্রশ্ন ৫ঃ যমুনা সেতুতে স্প্যান কয়টি?

উত্তরঃ যমুনা সেতুতে স্প্যান ৪৯ টি।

প্রশ্ন ৬ঃ যমুনা সেতুর স্থায়িত্ব কত বছর?

উত্তরঃ ধরা হয়েছে যমুনা সেতুর স্থায়িত্ব ১২০ বছর।

প্রশ্ন ৭ঃ যমুনা সেতু কে নির্মাণ করেন?

উত্তরঃ প্রথম ১৯৪৯ সালে যমুনা সেতু রাজনৈতিক পর্যায়ে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী স্থাপনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু সেসময় এই সেতুটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কাজ শুরু হয় ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর এবং ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

প্রশ্ন ৮ঃ যমুনা সেতু কারা তৈরি করেছে?

উত্তরঃ যমুনা বহুমুখী সেতুটি হুন্ডাই হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ দ্বারা ৬৯৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু পুরো সেতু প্রকল্পে অজ্ঞাত কারণে ব্যয় হয়েছে ১.২৪ বিলিয়ন ডলার। ব্যয়টি IDA, ADB, OECD এবং বাংলাদেশ সরকার ভাগ করেছে।

 

যমুনা সেতু বিশ্বের কততম সেতু 
বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু  বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার ৫ম এবং বিশ্বের ৯২তম দীর্ঘ সেতু। ১৯৯৮ সালের জুন মাসে এটি উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশের ৩টি বড় নদীর মধ্যে বৃহত্তম এবং পানি নির্গমনের দিক থেকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ নদী যমুনার উপর এটি নির্মিত হয়েছে। 


দৈর্ঘ্য

১৯৯৮ সালে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু সেতু বা যমুনা সেতু। এর মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সঙ্গে রয়েছে মূল সেতুতে উঠতে দুই পাশে ১২৮ মিটার ভায়াডাক্ট। সব মিলিয়ে এই সেতুর দৈর্ঘ্য পাঁচ কিলোমিটারের কম।

অন্যদিকে, পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য এর চেয়ে অনেক বেশি। এর মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। সঙ্গে রয়েছে দুই প্রান্তের ৩ দশমিক ১৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ভায়াডাক্ট। সেই হিসাবে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৯ দশমিক ২৯৮ কিলোমিটার।

পদ্মা সেতু 

নির্মাণ ব্যয় 

পদ্মা ও যমুনা সেতুর নির্মাণ ব্যয়েও রয়েছে পার্থক্য। যমুনা সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছিল ৯৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। ডলারের সঙ্গে টাকার সে সময়ের বিনিময় হারে এই ব্যয় ছিল ৪ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। বর্তমান বিনিময় হারের সঙ্গে তুলনা করলে এই খরচ দাঁড়ায় ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।

অন্যদিকে, পদ্মা সেতু নির্মাণে সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। 

যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু বা যমুনা সেতু তৈরি করা হয়েছে কংক্রিট দিয়ে। অন্যদিকে, পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে স্টিল স্ট্রাকচার। এছাড়াও ব্যবহার করা হয়েছে পাথর ও কংক্রিট। 

গঠন 

দুটি সেতুর গঠনেও রয়েছে পার্থক্য। যমুনা সেতু একতল বিশিষ্ট। এতে সড়ক পথের পাশ দিয়ে রাখা হয়েছে রেল পথের ব্যবস্থা। আর পদ্মা সেতু একটি দ্বিতল বিশিষ্ট সেতু। এতে ওপরে রয়েছে চার লেনের সড়ক পথ। নিচে রয়েছে রেল পথ। পদ

আপাতদৃষ্টিতে যমুনার তুলনায় পদ্মা সেতুতে টোলের পরিমাণ বেশি মনে হলেও বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দুই সেতুর টোলের পার্থক্য খুবই সামান্য। কিছু ক্ষেত্রে যমুনা সেতুর চেয়ে পদ্মার টোলের পরিমাণ বরং কম হতে যাচ্ছে। 

পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে একটি মোটরসাইকেলকে ১০০ টাকা টোল দিতে হবে। এই সেতুর চেয়ে দৈর্ঘ্যে প্রায় অর্ধেক যমুনা সেতু পাড়ি দিতে মোটরসাইকেলকে দিতে হয় ৫০ টাকা। 

দৈর্ঘ্যের হিসাবে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের টোল দাঁড়াচ্ছে প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা। বঙ্গবন্ধু সেতুর ক্ষেত্রে যার পরিমাণ ১০ টাকা ১৫ পয়সা। অর্থাৎ, পদ্মা পাড়ি দিতে যমুনার তুলনায় মোটরসাইকেলকে প্রতি কিলোমিটারে ৬০ পয়সা বেশি দিতে হবে। 

যমুনা সেতু বিশ্বের কততম সেতু 

আবার পদ্মা সেতু পার হতে মাইক্রোবাসকে গুণতে হবে ১ হাজার ৩০০ টাকা। অর্ধেক দৈর্ঘ্যের যমুনা সেতুতে খরচ লাগে ৭৫০ টাকা। হিসাব অনুযায়ী পদ্মা সেতুতে মাইক্রোবাসে প্রতি কিলোমিটারে টোল আসে ১৩৯ টাকা ৮২ পয়সা। যমুনা সেতুতে যার পরিমাণ ১৫২ টাকা ১৯ পয়সা। অর্থাৎ, মাইক্রোবাসে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটার হিসাবে যমুনার তুলনায় খরচ কমবে ১২ টাকা ৩৭ পয়সা।


এসব ছাড়াও যমুনার তুলনায় পদ্মাতে সেতু নির্মাণ করার বিষয়টিই ছিল চ্যালেঞ্জের। গভীরতম পাইলিং, উন্নতমানের উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে প্রমত্তা পদ্মার বুকে নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা সেতু। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে যা স্বপ্নের সেতু। এই সেতুতে যান চলাচলের মাধ্যমে কমবে যাত্রার সময়, উন্নতি হবে জীবনযাত্রার, কমবে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এমনটাই আশা করছেন তারা। ফেরিতে ভাড়া বাণিজ্য, নৈরাজ্য থেকেও মুক্তি পাবেন বলে মনে করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ জনগণ।

যমুনা সেতু বিশ্বের কততম সেতু 

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নামানুসারে সেতুটির নামকরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে দুই অংশকে একত্রিত করেছে। এই সেতু নির্মাণের ফলে জনগণ বহুভাবে লাভবান হচ্ছে এবং এটি আন্তঃআঞ্চলিক ব্যবসায় ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। 


সড়ক ও রেলপথে দ্রুত যাত্রী ও মালামাল পরিবহণ ছাড়াও এই সেতু বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাস সঞ্চালন এবং টেলিযোগাযোগ সমন্বিত করার সুযোগ করে দিয়েছে। টাঙ্গাইল থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত এই সেতু এশীয় মহাসড়ক ও আন্তঃএশীয় রেলপথের উপর অবস্থিত। এ দুটি সংযোগপথের কাজ সম্পন্ন হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে উত্তর-পশ্চিম ইউরোপ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন আন্তর্জাতিক সড়ক ও রেলসংযোগ স্থাপিত হবে।

 যমুনা সেতুর খরচ কত

সেতুটি নির্মাণে মোট খরচ হয় ৯৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আইডিএ, এডিবি, জাপানের ওইসিএফ প্রত্যেকে ২২ শতাংশ তহবিল সরবরাহ করে এবং বাকি ৩৪ শতাংশ ব্যয় বহন  করে বাংলাদেশ। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.৫ মিটার।

যমুনা নদীর প্রধান চ্যানেলের প্রস্থ ৩.৫ কিলোমিটারের বেশি নয়। এই বিষয়টি মাথায় রেখে এবং বন্যাজনিত কারণের জন্য আরও কিছুটা প্রশস্ততা বাড়িয়ে ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু যথেষ্ট বলে বিবেচনা করা হয়। ভৌত অবকাঠামোর কাজ শুরু করার এক বছর পর ১৯৯৫ সালের অক্টোবর মাসে সেতুটির মূল অংশ ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ধরে চূড়ান্ত প্রকল্প অনুমোদিত হয়।

যদিও বর্ষার মৌসুমে নদী ১৪ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হয়ে থাকে, সার্বিক প্রকল্প-ব্যয় অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক রাখার জন্য উক্ত সংকোচন অত্যাবশ্যক বিবেচনা করা হয়। এজন্য অবশ্য নদীর প্রবাহ সেতুর নিচ দিয়ে সীমাবদ্ধ রাখার উদ্দেশ্যে নদী শাসনের প্রয়োজন দেখা দেয়।


সম্ভাব্য দুর্যোগ ও ভূমিকম্প যাতে সহ্য করতে পারে সেজন্য সেতুটিকে ৮০-৮৫ মিটার লম্বা এবং ২.৫ ও ৩.১৫ মিটার ব্যাসের ১২১টি ইস্পাতের খুঁটির উপর বসানো হয়েছে। এই খুঁটিগুলি খুবই শক্তিশালী (২৪০ টন) হাইড্রোলিক হাতুড়ি দ্বারা বসানো হয়।


সেতুটিতে স্প্যানের সংখ্যা ৪৯ এবং ডেক খন্ডের সংখ্যা ১,২৬৩। সেতুটির উপর দিয়ে ৪ লেনের সড়ক এবং ২টি রেলট্রাক বসানো হয়েছে। সেতুটির উপরিকাঠামো ঢালাই করা খন্ডাংশ দিয়ে তৈরি এবং এগুলি সুস্থিত খিলান পদ্ধতিতে বসানো হয়েছে।


সেতুটি নির্মাণে সর্বমোট যে ব্যয় হয় মিলিয়ন ডলারে তার বিভাজন হচ্ছে: সেতু এবং তার উপরে তৈরি পথসমূহ ২৬৯, নদীশাসন ৩২৩, রাস্তা ও বাঁধসমূহ ৭১, উপদেষ্টা ৩৩, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ সংরক্ষণ ৬৭, সংস্থাপন ১৩, এবং অন্যান্য ১৮৬।


উপমহাদেশের এই অংশের জনগণ সর্বদাই বিশাল যমুনা নদীর উপর সেতু স্থাপনের মাধ্যমে গোটা অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সমন্বয়ের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে এসেছে। ১৯৪৯ সালে জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রথম রাজনৈতিক পর্যায়ে যমুনা সেতু নির্মাণের দাবি উত্থাপন করেন। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক নির্বাচনের সময় যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহারে এই সেতু নির্মাণের কথা অন্তর্ভুক্ত ছিল। 


১৯৬৪ সালের ৬ জানুয়ারি রংপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাইফুর রহমান যমুনা নদীর উপর সরকারের সেতু নির্মাণের কোন ইচ্ছা আছে কি-না জানতে চেয়ে প্রাদেশিক পরিষদে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। ১৯৬৬ সালের ১১ জুলাই রংপুর থেকে একই পরিষদের আরেকজন সদস্য শামসুল হক এই সেতু নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাব পেশ করেন এবং এটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।


১৯৬৯ সালে যুক্তরাজ্যের ফ্রিম্যান ফক্স অ্যান্ড পার্টনারস নামে একটি প্রতিষ্ঠান সেতুটির প্রাথমিক সম্ভাব্যতা নিয়ে সমীক্ষা পরিচালনা করে। তারা সিরাজগঞ্জের নিকট আনুমানিক ১৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে একটি রেল-কাম-সড়কসেতু নির্মাণের সুপারিশ করে। 

 যমুনা সেতুর খরচ কত

এই সমীক্ষা ছিল প্রাথমিক ধরনের এবং তারা বিস্তারিত সমীক্ষা পরিচালনার সুপারিশ করে। অন্যদিকে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বেতার-টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণদানকালে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দলের নির্বাচনী ওয়াদা হিসেবে যমুনা সেতু নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন।

কিন্তু এ সকল প্রচেষ্টা তৎকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মুক্তিযুদ্ধের কারণে বাস্তবায়িত হতে পারে নি। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭২ সালে যমুনা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয় এবং ১৯৭২-৭৩ সালের বাজেটে এজন্য বরাদ্দ রাখা হয়। যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত কিলোমিটার | যমুনা সেতু কত সলে চালু হয়

বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ১৯৭৩ সালে যমুনা নদীর উপর একটি সড়ক-কাম-রেলসেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা-সমীক্ষা হাতে নেয়। ১৯৭৬ সালে জাপান তাদের সমীক্ষা শেষ করে। তারা বলে যে যমুনা প্রকল্পে ৬৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হবে এবং এর অর্থনৈতিক মুনাফার হার হবে মাত্র ২.৬ শতাংশ। 


যেহেতু এটা প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয়, তাই তৎকালীন সরকার প্রকল্পটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। ১৯৮২ সালে সরকার যমুনা প্রকল্প পুনরুজ্জীবিত করে।


এ সময় সরকার যমুনার ওপারে পশ্চিমাঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাস সঞ্চালনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি সমীক্ষাদল নিয়োগ করে। সমীক্ষার উপসংহারে বলা হয় যে, শুধু গ্যাস সংযোগ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না।


উপদেষ্টাগণ একটি সড়ক-কাম-গ্যাস পরিবাহক সেতুর প্রকৌশলগত সম্ভাব্যতা ও এর ব্যয় নির্ধারণ করেন। এভাবেই বহুমুখী সেতু নির্মাণের প্রাথমিক ধারণার উৎপত্তি হয়।


তিন লেনবিশিষ্ট ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৪২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মন্ত্রিসভা এই রিপোর্ট অনুমোদন করে এবং এই প্রকল্পের অনুকূলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।


এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১৯৮৫ সালের ৩ জুলাই রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশবলে যমুনা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যমুনা সেতু সারচার্জ ও লেভি আদায়ের জন্য আরেকটি অধ্যাদেশ জারি হয়। অধ্যাদেশটির বিলুপ্তি পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় ৫.০৮ বিলিয়ন টাকা সংগ্রহ করা হয়। 


১৯৮৬ সালে এই সেতুর জন্য প্রথম পর্যায়ের সম্ভাব্যতা-সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এ সময় সিরাজগঞ্জ ও ভূয়াপুরের (টাঙ্গাইল) মধ্যবর্তী স্থানকে সেতুর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৮৭ সালের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের সম্ভাব্যতা-সমীক্ষা পরিচালিত হয়।


এতে দেখা যায় যে একটি সড়ক-কাম-রেল-কাম-বিদ্যুৎ লাইন পরিবাহী সেতু অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উভয়দিক থেকেই লাভজনক হবে। 


১৯৯২ সালে আইডিএ, এডিবি ও জাপানের ওইসিএফ সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নে সম্মত হয়। নির্মাণচুক্তির জন্য ১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক বিডিং-এর মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হয়। সেতু নির্মাণ, নদী শাসনের কাজ এবং দুটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের চুক্তি ১৯৯৪ সালের মার্চ মাসে সম্পাদিত হয়।


৯৯৪ সালের ১০ এপ্রিল সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়। ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর প্রকল্পের ভৌত নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন শুরু হয় এবং গ্যাস সঞ্চালন লাইন ব্যতীত সকল কাজ ১৯৯৮ সালের জুনের মধ্যে শেষ হয়। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।


বঙ্গবন্ধু সেতুকে বর্তমানে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে ন্যাস্ত করা হয়েছে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির অধিবাসীদের সাথে অন্যান্য অংশের সংযোগ সাধনের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক অঙ্গনে এটা বিশাল প্রভাব রাখছে। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url