পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নাম ও সময় | নামাজ কিভাবে পড়তে হয়?
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কিভাবে পড়তে হয়?: প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই ফরজ।ফরজের পাশাপাশি প্রত্যেক ওয়াক্তেই ওয়াজিব, সুন্নাত এবং নফল নামাজ রয়েছে।ইসলাম ধর্মের পাঁচটি রুকন অর্থাৎ পাঁচটি প্রধান জিনিস রয়েছে। ঈমানের পর সর্ব শ্রেষ্ঠ আমল হচ্ছে নামাজ।নামাজ পড়ার পূর্বে কিছু আহকাম রয়েছে যা আপনাকে অবশ্যই পালন করতে হবে।
1.ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ম:
ফজরে প্রথমে দুই রাকাআত সুন্নাত এবং পরে দুই রাকাআত ফরজ।
2.জোহর নামাজ পড়ার নিয়ম:
যুহরের নামাজ প্রথমে চার রাকাআত সুন্নাত। তারপর চার রাকাআত ফরজ এবং তারপর দুই রাকাআত সুন্নাত। এ দশ রাকাআত পড়া উত্তম। কেউ কেউ সর্বশেষ দুই রাকআত নফল নামাজও পড়ে। এ হিসেবে জোহরের নামাজ ১২ রাকাআত আদায় করা হয়।
3.আসর নামাজ পড়ার নিয়ম:
আসরের নামাজ চার রাকাআত পড়া ফরজ। কেউ কেউ ফরজের পূর্বে চার রাকাআত সুন্নাত নামাজ পড়ে থাকে।
4.মাগরিব নামাজ পড়ার নিয়ম:
মাগরিবে প্রথম তিন রাকাআত ফরজ। তারপর দুই রাকাআত সুন্নাত। কেউ কেউ সুন্নাতের পর দুই রাকাআত নফল পড়ে থাকে।
5.ইশা নামাজ পড়ার নিয়ম:
ইশার নামাজে চার রাকাআত ফরজ। তারপর দুই রাকাআত সুন্নাত। অতপর তিন রাকাআত বিতর। বিতর পড়া ওয়াজিব। অনেকে ফরজের পূর্বে চার রাকাআত সুন্নাত এবং বিতরের পর দুই রাকাআত নফলও নামাজ পড়ে থাকে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বর্ণ্নায় এখন জানব জায়নামজের দোয়া
জায়নামাজের দোয়াঃ ইন্নি উয়াজ্জাহতু উয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাসসামাওয়াতি উয়াল আরদ্বি হানিফা উয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন।
সানাঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা বিহামদিকা উতাওয়া রাকাসমুকা উয়াতায়ালা জাদ্দুকা উয়ালা ইলাহা গাইরুক।
সূরা ফাতিহাঃ আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আররাহমানির রাহিম,মা-লিকিয়াউ মিদ্দিন, ইয়া কানা’ বুদু উয়া ইয়া কানাসতায়িন, ইহদিনাসসিরাতাল মুস্তাকিম, সইরা ত্বাল্লাজিনা আন আম তায়ালাইহিম, ঘাইরিল মাগদু বিয়ালাইহিম, উয়ালাদ্দুয়াল্লিন।
রুকুঃ আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে।রুকুতে গিয়ে পড়তে হবে {সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম (৩বার উত্তম,বেশি পড়লে ভাল)}
সিজদাঃ সামিয়াল্লাহুলিমান হামিদা বলে রুকু থেকে উঠতে হবে। আবার আল্লহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে। (সিজদার নিয়ম হচ্ছে প্রথমে পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত সোজা রেখে দেহটাকে নিচের দিকে ঝুকিয়ে পরবর্তিতে হাটু ঝুকিয়ে প্রথমে কপাল পরে নাক মাঠিতে লাগানো) সিজদায় গিয়ে পড়তে হবে (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা,৩বার উত্তম, বেশি পড়লে ভাল)।
আত্তাহিয়াতুঃ আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি উয়াসসালাউয়াতু উয়াত্তাইয়িবাতি আসসালামু আলাইকা আইয়ু হান্নাবিয়ু উউয়া রাহমাতুল্লাহি উয়া বারাকাতুহু আসসালামু আলাইনা আলা ইবাদিল্লাহিস সুয়ালিহিন, আসহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু উয়া আসহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদু হুয়া রাসুলুহু।
আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালাঃ আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা মুহাম্মাদিউ উয়ালা আলি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা উয়ালা আলি ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ।
আল্লাহুম্মা বারিকালাঃ আল্লাহুম্ম বারিক আলা মুহাম্মাদিউ উয়ালা আলি মুহাম্মাদ কামা বারাক তা আলা ইব্রাহিমা উয়ালা আলি ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ।
আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতুঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাছিরা উয়ালা ইয়াগফিরু জুনুবা ইল্লা আনতা ফাগফিরিলি মাগফিরাতাম মিন হিমদিকা উয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
সালামঃ আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
৫. সালাতের শর্তাবলী
সালাতের বাইরের কিছু বিষয়, যা না হলে ছালাত সিদ্ধ হয় না, সেগুলিকে সালাতের শর্তাবলী বলা হয়। যা ৯টি। যেমন
(১) মুসলিম হওয়া (আলে ইমরান ৩/৮৫; তাওবা ৯/১৭)
(২) জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া (তিরমিযী, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৩২৮৭)
(৩) বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া ও সেজন্য সাত বছর বয়স থেকেই নামাজ আদায় শুরু করা (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৭২)
(৪) দেহ, কাপড় ও স্থান পাক হওয়া (মায়েদা ৫/৬, আরাফ ৭/৩১, মুদ্দাসসির ৭৪/৪; মুসলিম মিশকাত হা/২৭৬০ ক্রয় বিক্রয়’ অধ্যায়, ১ অনুচ্ছেদ; আবু দাউদ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৭৩৭, ৭৩৯, অনুচ্ছেদ-৭)
(৫) সতর ঢাকা। ছালাতের সময় পুরুষের জন্য দুই কাঁধ ও নাভি হতে হাটু পর্যন্ত এবং মহিলাদের দুই হাতের তালু ও চেহারা ব্যতীত মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সর্বাঙ্গ সতর হিসেবে ঢাকা। (মিশকাত হা/৭৫৫, সূরা নূর ২৪/৩১)
(৬) ওয়াক্ত হওয়া (নিসা ৪/১০৩)
(৭) ওযু-গোসল বা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা (মায়েদা ৬)
(৮) কিবলামুখী হওয়া (বাক্বারাহ ২/১৪৪)
(৯) সালাতের নিয়ত বা সংকল্প করা (বুখারী ও মিশকাতের প্রথম হাদীস)
৬. নামাজের ফরজ কয়টি
রুকন অর্থ স্তম্ভ। এগুলি অপরিহার্য বিষয়। যা ইচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে পরিত্যাগ করলে নামাজ বাতিল হয়ে যায়। যা ৭টি। যেমন
(১) কিয়াম বা দাঁড়ানো
আল্লাহ বলেন, আর তোমরা আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ চিত্তে দাঁড়িয়ে যাও। (বাক্বারা ২/২৩৮)
(২) তাকবীরে তাহরীমা
অর্থাৎ আল্লাহু আকবর বলে দুই হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠানো। আল্লাহ বলেন, তোমার প্রভুর জন্য তাকবীর দাও। (মুদ্দাসসির ৭৪/৩)। অর্থাৎ তার বড়ত্ব ঘোষণা কর। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, সালাতের জন্য সবকিছু হারাম হয় তাকবীরের মাধ্যমে এবং সবকিছু হালাল হয় সালাম ফিরানোর মাধ্যমে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১২)
(৩) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করা
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ঐ ব্যক্তির ছালাত সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করে না। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮২২)
(৪) রুকু করা
আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর ও সিজদা কর। (হজ্জ ২২/৭৭)।
(৫) সিজদা করা
আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর ও সিজদা কর। (হজ্জ ২২/৭৭)।
(৬) তাদীলে আরকান বা ধীর-স্থির ভাবে নামাজ আদায় করা
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায় শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সালাম দিলে তিনি তাকে সালামের জওয়াব দিয়ে বলেন, তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় কর। কেননা তুমি সালাত আদায় করনি।
এভাবে লোকটি তিনবার সালাত আদায় করল ও রাসূল (ছাঃ) তাকে তিনবার ফিরিয়ে দিলেন। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, এর চাইতে সুন্দরভাবে আমি সালাত আদায় করতে জানিনা। অতএব দয়া করে আপনি আমাকে সালাত শিখিয়ে দিন! (অতঃপর তিনি তাকে ধীরে-সুস্থে ছালাত আদায় করা শিক্ষা দিলেন)। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৭৯০, ‘সালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০)।
(৭) কাদায়ে আখিরাহ বা শেষ বৈঠক
হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় মহিলাগণ জামাতে ফরজ নামাজ শেষে সালাম ফিরানোর পরে উঠে দাঁড়াতেন এবং রাসূল (ছাঃ) ও পুরুষ মুসল্লিগণ কিছু সময় বসে থাকতেন। অতঃপর যখন রাসূল (ছাঃ) দাঁড়াতেন তখন তারাও দাঁড়াতেন। (বুখারী, মিশকাত হা/৯৪৮ তাশাহুদে দোয়া অনুচ্ছেদ-১৭)
এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শেষ বৈঠকে বসা এবং সালাম ফিরানােটাই ছিল রাসূল (সাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের নিয়মিত সুন্নাত। প্রকাশ থাকে যে, কঠিন অসুখ বা অন্য কোন বাস্তব কারণে অপারগ অবস্থায় উপরোক্ত শর্তাবলী ও রুকন সমূহ ঠিকমত আদায় করা সম্ভব না হলে বসে বা শুয়ে ইশারায় নামাজ আদায় করবে। (বুখারী; মিশকাত হা/১২৪৮)। কিন্তু জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোন অবস্থায় নামাজ মাফ নেই।
৭. নামাজের ওয়াজিব কয়টি
রুকন-এর পরেই ওয়াজিবের স্থান, যা আবশ্যক। যা ইচ্ছাকৃতভাবে তরক করলে নামাজ বাতিল হয়ে যায়; এবং ভুলক্রমে তরক করলে ‘সিজদায়ে সাহু’ দিতে হয়। সালাতের ওয়াজিব ৮টি। যেমন
১. তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অন্য সকল তাকবীর। (বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য, মিশকাত হা/৭৯৯, ৮০১)
২. রুকুতে তাসবিহ পড়া। কমপক্ষে সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম’ বলা। (নাসাঈ, আবু দাউদ তিরমিযী, মিশকাত হা/৮৮১ রুকূ অনুচ্ছেদ-১৩)
৩. কওমার সময় সামিআল্লাহ-হুলিমান হামিদাহ বলা। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/ ৮৭০, ৭৪, ৭৫, ৭৭)
৪. কওমার দো’আ কমপক্ষে রব্বানা লাকাল হামদ’ অথবা ‘আল্লা-হুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ’ বলা। (বুখারী হা/৭৩২-৩৫, ৭৩৮; মুসলিম হা/৯০৪, ৯১৩।
৫. সিজদায় গিয়ে তাসবিহ পড়া। কমপক্ষে সুবহা-না রাব্বিয়াল আ’লা’ বলা। (নাসাঈ, আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/ ৮৮১)
৬. দুই সিজদার মাঝখানে স্থির হয়ে বসা ও দো‘আ পাঠ করা। যেমন কমপক্ষে রব্বিগফিরলী’ ২ বার বলা। (ইবনু মাজাহ হা/৮৯৭; আবুদাউদ হা/৮৫০)
৭. প্রথম বৈঠকে বসা ও তাশাহুদ পাঠ করা। (মিশকাত হা/৯০৯)
৮. সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করা। (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১২)
৮. নামাজের সুন্নত কয়টি
ফরজ ও ওয়াজিব ব্যতীত ছালাতের বাকি সব আমলই সুন্নাত। যেমন
(১) জুমার ফরজ নামাজ ব্যতীত দিবসের সকল নামাজ নীরবে ও রাত্রির ফরজ নামাজ সমূহ সরবে পড়া
(২) প্রথম রাকাতে কিরাতের পূর্বে আউযুবিল্লাহ চুপে চুপে পাঠ করা
(৩) সালাতে পঠিতব্য সকল দোয়া পাঠ করা
(৪) বুকে হাত বাঁধা
(৫) রাফউল ইয়াদাইন করা
(৬) আমীন বলা
(৭) সিজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে আগে হাত রাখা
(৮) জালসায়ে ইস্তিরাহাত করা
(৯) মাটিতে দুই হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ানো
(১০) সালাতে দাঁড়িয়ে সিজদার স্থানে নজর রাখা
(১১) তাশাহুদের সময় ডান হাত ৫৩ এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ করা ও শাহাদাত আঙ্গুল নাড়াতে থাকা; এছাড়া ফরয ওয়াজিবের বাইরে সকল বৈধ কর্মসমূহ।
৯. নামাজ ভঙ্গের কারণ
১. ছালাতরত অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খাওয়া বা পান করা।
২. সালাতের স্বার্থ ব্যতিরেকে অন্য কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বলা।
৩. ইচ্ছাকৃতভাবে বাহুল্য কাজ বা ‘আমলে কাছীর’ করা। যা দেখলে ধারণা হয় যে, সে সালাতের মধ্যে নয়।
৪. ইচ্ছাকৃত বা বিনা কারণে সালাতের কোন রুকন বা শর্ত পরিত্যাগ করা।
৫. সালাতের মধ্যে অধিক হাস্য করা।
১০. নামাজ কত রাকাত
পাঁচ ওয়াক্তে দিনে-রাতে মোট ১৭ রাকাত ও জুমার দিনে ১৫ রাকাত নামাজ ফরজ এবং ১২ অথবা ১০ রাকাত নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যেমন
(১) ফজরের নামাজ কয় রাকাত
ফজরের নামাজ ২ রাকাত সুন্নাত, অতঃপর ২ রাকাত ফরজ
(২) যোহরের নামাজ কয় রাকাত
যোহরের নামাজ ৪ অথবা ২ রাকাত সুন্নাত, অতঃপর ৪ রাকাত ফরজ। অতঃপর ২ রাকাত সুন্নত
(৩) আসরের নামাজ কত রাকাত
আসরের নামাজ ৪ রাকাত ফরজ
(৪) মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত
মাগরিবের নামাজ ৩ রাকাত ফরজ। অতঃপর ২ রাকাত সুন্নত
(৫) এশার নামাজ কয় রাকাত
এশার নামাজ ৪ রাকাত ফরজ। অতঃপর ২ রাকাত সুন্নাত। অতঃপর শেষে এক রাকাত বিতর।
জুম’আর নামাজ ২ রাকাত ফরজ। জুমা পড়লে যোহর পড়তে হয় না। কেননা জুমা হল যোহরের স্থলাভিষিক্ত। ফরজের পূর্বে মসজিদে প্রবেশের পর বসার পূর্বে কমপক্ষে ২ রাকাত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ এবং জুমা শেষে ৪ অথবা ২ রাকআত সুন্নাত।
উপরে বর্ণিত সবগুলো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিয়মিত আমল দ্বারা নির্ধারিত এবং ছহীহ হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত।
ছহীহ ইবনু খুযায়মা ‘ছালাত অধ্যায়, ২ অনুচ্ছেদ; নাসাঈ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৫, অনুচ্ছেদ-৩
১১. নামাজের ওয়াক্ত সমূহ
আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা ফরয। আল্লাহ বলেন, মুমিনদের উপর ‘নামাজ’ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে’ (নিসা ৪/১০৩)। মিরাজ রজনীতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয হওয়ার পরের দিন যোহরের সময় জিবরীল (আঃ) এসে প্রথম দিন আউয়াল ওয়াক্তে ও পরের দিন আখেরি ওয়াক্তে নিজ ইমামতিতে পবিত্র কাবা চত্বরে মাকামে ইবরাহীমের পাশে দাঁড়িয়ে দুই দিনে পাঁচ পাঁচ দশ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কে ছালাতের পসন্দনীয় সময়কাল ঐ দুই সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
(আবু দাউদ হা/৩৯৩; তিরমিযী হা/১৪৯) তবে আউয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় করাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বোত্তম আমল হিসাবে অভিহিত করেছেন। (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৬০৭)
(১) ফজর
ছুবহে ছাদিক হতে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সর্বদা ‘গালাস’ বা ভােরের অন্ধকারে ফজরের সালাত আদায় করতেন এবং জীবনে একবার মাত্র ‘ইসফার’ বা চারিদিকে ফর্সা হওয়ার সময়ে ফজরের ছালাত আদায় করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটাই তার নিয়মিত অভ্যাস ছিল। (আবুদাঊদ হা/৩৯৪)
১৯৭ অতএব ‘গালাস’ ওয়াক্তে অর্থাৎ ভােরের অন্ধকারে ফজরের ছালাত আদায় করাই প্রকৃত সুন্নাত।
(২) যোহর
সূর্য পশ্চিম দিকে ঢললেই যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং বস্তুর নিজস্ব ছায়ার এক গুণ হলে শেষ হয়। (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১)
(৩) আছর
বস্তুর মূল ছায়ার এক গুণ হওয়ার পর হতে আসরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং দুই গুণ হলে শেষ হয়। তবে সূর্যাস্তের প্রাক্কালের রক্তিম সময় পর্যন্ত আছর পড়া জায়েয আছে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৮৩)
(৪) মাগরিব
সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেই মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্যের লালিমা শেষ হওয়া পর্যন্ত বাকী থাকে। (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১)
(৫) এশা
মাগরিবের পর হতে এশার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মধ্যরাতে শেষ হয়। (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১)
তবে যরূরী কারণ বশতঃ ফজরের পূর্ব পর্যন্ত এশার সালাত আদায় করা জায়েয আছে। (মুসলিম হা/১৫৬২)
প্রচণ্ড গ্রীষ্মে যোহরের সালাত একটু দেরিতে এবং প্রচণ্ড শীতে এশার সালাত একটু আগেভাগে পড়া ভালো। তবে কষ্টবোধ না হলে এশার সালাত রাতের এক তৃতীয়াংশের পর আদায় করা উত্তম। (বুখারী, মিশকাত হা/৫৯০-৯১)
১২. নামাজের নিষিদ্ধ সময়
সূর্যোদয়, মধ্যাহ্ন ও সূর্যাস্ত কালে সালাত শুরু করা সিদ্ধ নয়। (মুসলিম, মিশকাত হা/১০৩৯-৪০)
অনুরূপভাবে আসরের সালাতের পর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এবং ফজরের সালাতের পর হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোন সালাত নেই। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১০৪১)
তবে এ সময় কাযা সালাত আদায় করা জায়েয আছে। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৪৩)
বিভিন্ন হাদীছের আলোকে অনেক বিদ্বান নিষিদ্ধ সময় গুলিতে ‘কারণ বিশিষ্ট’ সালাত সমূহ জায়েয বলেছেন। যেমন তাহিয়্যাতুল মসজিদ, তাহিয়্যাতুল ওযু, সূর্য গ্রহণের ছালাত, জানাযার সালাত ইত্যাদি। জুম’আর ছালাত ঠিক দুপুরের সময় জায়েজ আছে।
অমনিভাবে কাবা গৃহে দিবারাত্রি সকল সময় সালাত ও তাওয়াফ জায়েজ আছে। (নাসাঈ, আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/ ১০৪৫)
১৩. নামাজের নিষিদ্ধ স্থান
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, সমগ্র পৃথিবীই সিজদার স্থান, কেবল কবরস্থান ও গােসলখানা ব্যতীত। (আবু দাউদ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৭৩৭)। সাতটি স্থানে সালাত নিষিদ্ধ হওয়ার হাদীছটি যঈফ। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/৭৩৮ আলবানী, ইরওয়া হা/২৮৭; যঈফুল জামে হা/৩২৩৫)
১৪. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও দোয়া সমূহ. নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সহীহ হাদিস
১৪.১. নিয়ত
নিয়ত অর্থ সংকল্প। সালাতের শুরুতে নিয়ত করা অপরিহার্য। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, সকল কাজ নিয়তের উপরে নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাই-ই পাবে, যার জন্য সে নিয়ত করবে। (সহীহ বুখারী ও মিশকাত -এর ১ম হাদীছ) অতএব সালাতের জন্য ওযু করে পবিত্র হয়ে পরিচ্ছন্ন পোশাক ও দেহ-মন নিয়ে কা’বা গৃহ পানে মুখ ফিরিয়ে মনে মনে সালাতের দৃঢ় সংকল্প করে স্বীয় প্রভুর সন্তুষ্টি কামনায় তার সম্মুখে বিনম্র চিত্তে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
মুখে নিয়ত পাঠের প্রচলিত রেওয়াজটি দ্বীনের মধ্যে একটি নতুন সৃষ্টি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সালাতে এর কোন স্থান নেই। অনেকে সালাত শুরুর আগেই জায়নামাজের দোয়া মনে করে ইন্নী ওয়াজ্জাহতু…পড়েন। এই রেওয়াজটি সুন্নাতের বরখেলাপ। মূলত জায়নামাজের দোয়া বলে কিছু নেই।
১৪.২. তাকবীরে তাহরীমা
ওযু করার পর ছালাতের সংকল্প করে ক্বিবলামুখী দাঁড়িয়ে দুই হাতের আংগুল সমূহ ক্বিবলামুখী খাড়াভাবে কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠিয়ে দুনিয়াবী সবকিছুকে হারাম করে দিয়ে স্বীয় প্রভুর মহত্ত্ব ঘোষণা করে বলবে ‘আল্লা-হু আকবার’ (আল্লাহ সবার চেয়ে বড়)। অতঃপর বাম হাতের উপর ডান হাত বুকের উপরে বেঁধে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সম্মুখে নিবেদিত চিত্তে সিজদার স্থান বরাবর দৃষ্টি রেখে দন্ডায়মান হবে।
ওয়ায়েল বিন হুজুর (রাঃ) বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে সালাত আদায় করলাম। এমতাবস্থায় দেখলাম যে, তিনি বাম হাতের উপরে ডান হাত স্বীয় বুকের উপর রাখলেন।
ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৪৭৯; আবুদাউদ হা/৭৫৫, ইবনু মাসঊদ হতে; ঐ, হা/৭৫৯
১৪.৩. ছানা
ছানা অর্থ প্রশংসা। এটা মূলতঃ দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ বা ছালাত শুরুর দো’আ; বুকে জোড় হাত বেঁধে সিজদার স্থানে দৃষ্টি রেখে বিনম্র চিত্তে নিম্নোক্ত দোআর মাধ্যমে মুছল্লী তার সর্বোত্তম ইবাদতের শুভ সূচনা করবে।
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-‘এদ বায়নী ওয়া বায়না খাত্বা-ইয়া-ইয়া, কামা বা‘আদতা বায়নাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিবি। আল্লা-হুম্মা নাককিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া, কামা ইউনাককৃাছ সাওবুল আব ইয়াযু মিনাদ দানাসি। আল্লা হুম্মাগসিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিল মা-য়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি’।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি আমার ও আমার গুনাহ সমূহের মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন, যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে পরিচ্ছন্ন করুন গুনাহ সমূহ হতে, যেমন পরিচ্ছন্ন করা হয় সাদা কাপড় ময়লা হতে। হে আল্লাহ, আপনি আমার গুনাহ সমূহকে ধুয়ে সাফ করে দিন পানি দ্বারা, বরফ দ্বারা ও শিশির দ্বারা।
মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮১২ তাকবীরের পর যা পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১।
একে ‘ছানা বা দোয়ায়ে ইস্তেফতাহ বলা হয়। ছানার জন্য অন্য দো’আও রয়েছে। তবে এই দো’আটি সর্বাধিক বিশুদ্ধ।
১৪.৪. সূরায়ে ফাতিহা পাঠ
দোয়ায়ে ইস্তেফতাহ বা ছানা’ পড়ে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ সহ সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে এবং অন্যান্য রাকাতে কেবল বিসমিল্লাহ বলবে। জেহরী সালাত হলে সূরায়ে ফাতিহা শেষে সশব্দে আমীন’ বলবে।
১৪.৫. কিরাআত
সূরায়ে ফাতিহা পাঠ শেষে ইমাম কিংবা একাকী মুছল্লী হলে প্রথম দু’রাকআতে কুরআনের অন্য কোন সূরা বা কিছু আয়াত তিলাওয়াত করবে। কিন্তু মুক্তাদী হলে জেহরী সালাতে চুপে চুপে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়বে ও ইমামের ক্বিরাআত মনোযোগ দিয়ে শুনবে। তবে যোহর ও আসরের ছালাতে ইমাম মুক্তাদী সকলে প্রথম দু’রাকআতে সূরায়ে ফাতিহা সহ অন্য সূরা পড়বে এবং শেষের দুই রাকাতে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে।
১৪.৬. রুকু
কিরাআত শেষে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে দু হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠিয়ে ‘রাফউল ইয়াদায়েন করে রুকুতে যাবে। এ সময় হাঁটুর উপরে দুই হাতে ভর দিয়ে পা, হাত, পিঠ ও মাথা সোজা রাখবে এবং রুকুর দো’আ পড়বে।
রুকুর দো’আ : সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম’ (মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি মহান) কমপক্ষে তিনবার পড়বে।
১৪.৭. কওমা
অতঃপর রুকু থেকে উঠে সোজা ও সুস্থিরভাবে দাঁড়াবে। এ সময় দু’হাত কিবলামুখী খাড়া রেখে কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে এবং ইমাম ও মুক্তাদী সকলে বলবে ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ (আল্লাহ তার কথা শোনেন, যে তার প্রশংসা করে)। অতঃপর ‘কওমা’র দো’আ একবার পড়বে।
কওমার দোয়া : রাব্বানা লাকাল হামদ’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা)। অথবা পড়বে- রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু হামদান কাছীরান ত্বইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্য অগণিত প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়)। কওমার জন্য অন্য দোয়াও রয়েছে।
১৪.৮. সিজদা
কওমার দো’আ পাঠ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে প্রথমে দু’হাত ও পরে দুই হাটু মাটিতে রেখে সিজদায় যাবে ও বেশি বেশি দুআ পড়বে। এ সময় দু’হাত কিবলামুখী করে মাথার দুই পাশে কাধ বা কান বরাবর মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবে।
কনুই ও বগল ফাঁকা থাকবে। হাঁটুতে বা মাটিতে ঠেস দিবে না। সিজদা লম্বা হবে ও পিঠ সোজা থাকবে। যেন নিচ দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মতো ফাঁকা থাকে। সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে। এ সময় স্থির ভাবে বসে দোয়া পড়বে।
অতঃপর আল্লা-হু আকবর’ বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে ও দোয়া পড়বে। রুকু ও সিজদায় কুরআনী দু’আ পড়বে না। ২য় ও ৪র্থ রাকাতে দাঁড়ানোর প্রাক্কালে সিজদা থেকে উঠে সামান্য সময়ের জন্য স্থির হয়ে বসবে। একে ‘জালসায়ে ইস্তিরাহাত’ বা ‘স্বস্তির বৈঠক’ বলে। অতঃপর মাটিতে দু’হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে।
সিজদার দো’আ : (সুবহা-না রাব্বিয়াল আ’লা) অর্থ ‘মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি সর্বোচ্চ। কমপক্ষে তিনবার পড়বে। রুকু ও সিজদার অন্য দো’আও রয়েছে। দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো’আ :
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফির লী ওয়ারহানী ওয়াজ বুরনী ওয়াহদিনী ওয়া ‘আফিনী ওয়ারঝুকুনী। অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপরে রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমাকে রুযী দান করুন।
তিরমিযী হা/২৮৪; ইবনু মাজাহ হা/৮৯৮; আবু দাউদ হা/৮৫০
১৪.৯. বৈঠক
২য় রাকাত শেষে বৈঠকে বসবে। তিন রাকাত ও চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজে ২য় রাকাতের পর ১ম বৈঠক শেষ করে আল্লাহু আকবার বলে উঠে দাড়াবে এবং দুই হাত কান অথবা কাধ বরাবর উঠিয়ে পুনরায় বুকের উপর বাধবে।
নামাজ হলে ৩য় ও ৪র্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলাতে হবে না কিন্তু সুন্নাত বা নফল হলে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। তারপর শেষ বৈঠক করতে হবে। আর দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাজে ২য় রাকাতের পর শেষ বৈঠক করতে হবে।
১ম বৈঠকে কেবল ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ে ৩য় রাকাতের জন্য উঠে যাবে। আর শেষ বৈঠকে ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ার পরে দরূদ, দো’আয়ে মাছূরাহ ও সম্ভব হলে বেশি বেশি করে অন্য দোয়া পড়বে।
১ম বৈঠকে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে এবং শেষ বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে বাম নিতম্বের উপরে বসবে ও ডান পা খাড়া রাখবে। এ সময় ডান পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করবে।
বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলি বাম হাঁটুর প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে এবং ডান হাত ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ রেখে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত শাহাদাত অঙ্গুলি নাড়িয়ে ইশারা করতে থাকবে। মুসল্লির নজর ইশারার বাইরে যাবে না।
১৪.৯.১. তাশাহ্হুদ (আত্তাহিইয়া-তু):
উচ্চারণ : আত্তাহিইয়া-তু লিল্লা-হি ওয়াছ ছালাওয়া-তু ওয়াত্ ত্বাইয়িবা-তু আসসালা-মু আলায়কা আইয়ুহান নাবিইয়ু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আসসালামু আলায়না ওয়া আলা ইবা-দিল্লা-হিছ ছা-লিহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।। অনুবাদ : যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয় পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধি সমূহ নাযিল হোক। শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের উপরে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল (বুঃ মুঃ)।
মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯ ‘ছালাত অধ্যায়-৪, ‘তাশাহুদ’ অনুচ্ছেদ-১৫
১৪.৯.২. দরূদ :
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছাল্লে আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লায়তা ‘আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা বা-রতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে । নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।
মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯১৯
১৪.৯.৩. দো’আয়ে মাছূরাহ :
মাছুরা অর্থ হাদিসে বর্ণিত। সেই হিসাবে হাদীসে বর্ণিত সকল দো’আই মাসুরা। কেবলমাত্র একটি দোয়া নয়। তবে নিম্নের দোয়াটিই এদেশে ‘দো’আয়ে মাছূরাহ’ হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাক্সী যুলমান কাছীরাও অলা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের উপর অসংখ্য যুলুম করেছি। ঐসব গুনাহ মাফ করার কেউ নেই আপনি ব্যতীত। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ হতে বিশেষভাবে ক্ষমা করুন এবং আমার উপরে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।
মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯৪২ ‘তাশাহহুদে দো’আ অনুচ্ছেদ-১৭; বুখারী হা/৮৩৪ আযান অধ্যায়-২, সালামের পূর্বে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৪৯।
তাশাহুদের শেষে নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ করার জন্য বিশেষভাবে তাকীদ এসেছে –
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নামা ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল কাবরি, ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহি দাজ্জা-লি, ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামা-তি। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় ভিক্ষা করছি জাহান্নামের আযাব হতে, কবরের আযাব হতে, দাজ্জালের ফিতনা হতে এবং জীবন ও মৃত্যু কালীন ফিতনা হতে।
মুসলিম, মিশকাত হা/৯৪০-৪১
তাশাহুদ ও সালামের মধ্যেকার দো’আ সমূহের শেষে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নিমের দো’আ পড়তেন :
(১) উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখশারতু, ওয়ামা আসরারতু অমা আ লানতু, ওয়ামা আসরাফতু, ওয়া মা আংতা আলামু বিহী মিন্নি; আংতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আংতাল মুয়াখখিরু, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা।
অনুবাদঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বাপর গোপন ও প্রকাশ্য সকল গোনাহ মাফ কর (এবং মাফ কর ঐসব গোনাহ) যাতে আমি বাড়াবাড়ি করেছি এবং ঐসব গুনাহ যে বিষয়ে তুমি আমার চাইতে বেশী জানাে। তুমি অগ্র পশ্চাতের মালিক। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই।
মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘তাকবীরের পরে কি পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১।
(২) আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’ঊযু বিকা মিনান্না-র’
(হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চাচ্ছি)।
আবু দাউদ হা/৭৯৩, ‘ছালাত অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১২৮; সহীহ ইবনে হিব্বান হা/৮৬৫
তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে দো’আ বিষয়ে জ্ঞাতব্য: রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাশাহুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে বিভিন্ন দো’আ পড়তেন।
মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩ তাকবীরের পর যা পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১; নববী, রিয়াদুস সালেহীন ‘জিকির’ অধ্যায় হা/১৪২৪।
ইবনু মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত তাশাহহুদে (অর্থাৎ আত্তাহিয়াতু)এর শেষে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর দো’আ সমূহের মধ্যে যে দো’আ সে পসন্দ করে, তা করবে।
মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯; মিরআত হা/৯১৫, ৩/২৩৫।
এ কথার ব্যাখ্যায় বিদ্বান গণের মধ্যে একদল বলেছেন, এ সময় গোনাহ নেই এবং আদবের খেলাফ নয়, দুনিয়া ও আখেরাতের এমন সকল প্রকার দুআ করা যাবে। পক্ষান্তরে অন্যদল বলেছেন, কুরআন হাদীসে বর্ণিত দো’আ সমূহের মাধ্যমেই কেবল প্রার্থনা করতে হবে। কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমাদের এই ছালাতে মানুষের সাধারণ কথাবার্তা বলা চলে না। এটি কেবল তাসবিহ, তাকবির ও কুরআন পাঠ মাত্র
মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৯৭৮
বর্ণিত উভয় হাদীছের মধ্যে সামঞ্জস্য এটাই হতে পারে যে, অন্যের উদ্দেশ্যে নয় এবং আদবের খেলাফ নয়, আল্লাহর নিকট এমন সকল দো’আ করা যাবে। তবে সালাতের পুরা অনুষ্ঠানটিই যেহেতু আরবী ভাষায়, সেহেতু অনারবদের জন্য নিজেদের তৈরী করা আরবীতে প্রার্থনা করা নিরাপদ নয়। দ্বিতীয়ত: সর্বাবস্থায় সকলের জন্য হাদীছের দুআ পাঠ করাই উত্তম। কিন্তু যখন দো’আ জানা থাকে না, তখন তার জন্য সবচেয়ে উত্তম হবে প্রচলিত দো’আয়ে মাছূরাহ (আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু…) শেষে নিম্নের দোআটির ন্যায় যে কোন একটা সারগর্ভ দোয়া পাঠ করা, যা দুনিয়া ও আখেরাতের সকল প্রয়ােজনকে শামিল করে। আনাস (রাঃ) বলেন, এ দোয়াটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অধিকাংশ সময় পড়তেন।
আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আ-খিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া কিনা আযা-বান্না-র। অথবা আল্লা-হুম্মা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া ..।
হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দাও ও আখেরাতে মঙ্গল দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও।
বুখারী হাদিস নং ৪৫২২
এ সময় দুনিয়াবী চাহিদার বিষয় গুলো নিয়তের মধ্যে শামিল করবে। কেননা আল্লাহ বান্দার অন্তরের খবর রাখেন ও তার হৃদয়ের কান্না শুনেন। দোয়ার সময় নির্দিষ্টভাবে কোন বিষয়ে নাম না করাই ভাল। কেননা ভবিষ্যতে বান্দার কিসে মঙ্গল আছে, সেটা আল্লাহ ভালো জানেন।
নামাজের নিয়ম ও দোয়া সমূহ. নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সহীহ হাদিস. Namaz porar niom
১৪.১০. সালাম
দো’আয়ে মাছূরাহ শেষে প্রথমে ডানে ও পরে বামে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ (আল্লাহর পক্ষ হতে আপনার উপর শান্তি ও অনুগ্রহ বর্ষিত হোক!) বলে সালাম ফিরাবে। প্রথম সালামের শেষে ‘ওয়া বারাকাতুহু’ (এবং তার বরকত সমূহ) যোগ করা যেতে পারে। এভাবে সালাত সমাপ্ত করে প্রথমে সরবে একবার ‘আল্লা-হু আকবর’ (আল্লাহ সবার বড়) ও তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ (আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি) বলে নিম্নের দুআ সমূহ এবং অন্যান্য দো’আ পাঠ করবে। এ সময় ইমাম হলে ডানে অথবা বামে ঘুরে সরাসরি মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে বসবে। অতঃপর সকলে নিম্নের দো’আ সহ অন্যান্য দো’আ পাঠ করবে।
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আন্তাস সালা-মু ওয়া মিকাস্ সালা-মু, তাবা-রক্ত ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।
অনুবাদ : হে আল্লাহ আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক।
নামাজ-এর নিয়ম কী?
সংক্ষেপে বললে নামাজের দুটি দিক আছে ৷ একটি বাহ্যিক ৷ আরেকটি অভ্যন্তরিক ৷ নামাজের বাহির হলো, ফরজ সুন্নত মুসতাহাব যতো বিষয় আছে সব যথাযথভাবে জেনে ও মেনে নামাজ পড়া ৷
আর ভিতর হলো, নামাজে দিল কে হাজির রাখা ৷ আমি আল্লাহর সামনে তাকে দেখে দেখে নামাজ পড়ছি ৷ বা আমাকে আল্লাহ দেখছেন ৷ তার দৃষ্টিসীমায় দাঁড়িয়ে তার এবাদত করছি, এই অনূভুতির সাথে নামাজ পড়া ৷
পাশাপাশি প্রত্যেক ওয়াক্তের আগে পরের সুন্নাত ও নফল আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।